বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) দেশের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত ব্যাংক, যা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাঙালি জাতির সংস্কৃতিতে একটি আনন্দঘন এবং ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান বাংলা নববর্ষ। এই সময় পাওনাদারগণ (বিশেষত ব্যবসায়ীগণ, কৃষক ও খামারিরা) ঐতিহ্য এবং কালের ধারাবাহিকতায় হালখাতা পালনের মাধ্যমে তাদের পাওনা টাকা আদায় এবং গ্রাহকগণকে মিষ্টিমুখ এবং পান সুপারি দিয়ে আপ্যায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসবমুখর কর্মসূচি পালন করে থাকে।
বিকেবি দেশের এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে ‘শুভ হালখাতা অনুষ্ঠান’ প্রতিটি শাখায় ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় পালন করে থাকে। অনুষ্ঠানে কৃষক এবং অন্যান্য ঋণগ্রহীতা গ্রাহকগণ তাঁদের পুরাতন ঋণ পরিশোধ করে থাকেন এবং প্রয়োজনে নতুন ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের পেছনে বিকেবির শাখা পর্যায়ের ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাদের ঘাম ঝরানো শ্রম লেগে থাকে। তাঁরা মাসব্যাপী বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাসহ ঋণ গ্রহীতাগণের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালখাতার দাওয়াতসহ নানাবিধ কর্মসূচি সফল করার সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন।
কিন্তু এ বছর দেখা গেল ভিন্ন চিত্র, কৃষি ব্যাংকের সকল শাখায় পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী হালখাতা অনুষ্ঠানে আয়োজনের মাধ্যমে দিনব্যাপী ঋণ আদায় ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও বিকেবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রধান কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ প্রধান কার্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে দিনব্যাপী বর্ষবরণের নামে স্বাভাবিক কর্মদিবসে নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়ার মতো অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন। যা সরকারি অর্থের অপচয় এবং কর্মঘণ্টা নষ্ট করার শামিল।
অপরদিকে অভিযোগ উঠেছে যে সারা বছর ব্যাপী শাখা পর্যায়ের ১০ম গ্রেডের সকল অফিসারগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকের প্রয়োজনে তাদের ঋণ প্রদানসহ ব্যাংকিং সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন, কিন্তু দীর্ঘ ৮ মাস ধরে এই ১০ম গ্রেডের প্রমোশন বঞ্চিত অফিসাররা তাদের ন্যায্য দাবি পদোন্নতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার দ্বারস্থ হলেও তারা কোন রকম পদোন্নতি পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো দমন নিপীড়ন করার জন্য নানান কলা কৌশল করে যাচ্ছে।
এছাড়াও নাম না প্রকাশ করার শর্তে এমডির নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত ৩০ বছরে বিকেবির ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বছর সময়ের মধ্যে দুই বার ডিপিসি (ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কিছু পদোন্নতি দেয়ার বিনিময়ে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেন ইতিমধ্যে সংঘটিত হয়েছে এবং আরো বিপুল পরিমাণের অনৈতিক আর্থিক লেনদেন করার উদ্দেশ্যেই মূলত এই ডিপিসি করা হবে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীগণের মধ্যে অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে সুপারনউমারারি পদোন্নতি দেয়া না হলে, ব্যাংকটির ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তাগণ অনির্ধারিত তারিখে এবং দ্রুততম সময়ে শাটডাউন এবং প্রধান কার্যালয় ঘেরাও এর মতো কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছেন।
দীর্ঘ ৮ মাস অতিবাহিত হলেও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহের কর্মকর্তাগণের মতো তাদের দাবি মেনে না নেয়ায় তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের পথে হাঁটছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।