ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা ও প্রো-ভিসি মামুন আহমেদের পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৪টার মধ্যে দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি এবং নিজেদের অবস্থান নিয়ে ব্রিফ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবিগুলো তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো-
১. ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘাতের দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং প্রো-ভিসি মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলাসহ ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর নিউমার্কেট থানা পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় এসি, ওসিসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঢাবি শিক্ষার্থীদের ইডেন কলেজ ও বদরুন্নেসা কলেজসহ সাত কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাত কলেজের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সম্পর্কের চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে তা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ইউজিসি সদস্য এবং ঢাবি ভিসির সমন্বয়ে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি টিমের সাথে তাৎক্ষণিক উচ্চ পার্যায়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে এই ঘটনার সমাধান করতে হবে।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট এরিয়ায় সিটি করপোরেশনের রাস্তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা কলেজের মো. শফিক উদ্দিন ও ইডেন মহিলা কলেজের সুমাইয়া আক্তার। তারা বলেন, আজ সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যে ঢাবির উপ-উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে হবে। না হলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সজীব উদ্দিন বলেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গতরাতের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হয়নি। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে সেটা পরেই জানানো হবে।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। আমরা তাদের বিচার চাই।
এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবারের (২৭ জানুয়ারি) সব পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত করার পর এবার সাত কলেজের সব চূড়ান্ত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত সাত কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রোববার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে মিছিল নিয়ে আসে। তারা নীলক্ষেত মোড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী বেরিয়ে এসে তাদের ধাওয়া দেন। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এতে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজের সমস্যা ও ভর্তির আসন সংখ্যা কমানোর বিষয়ে ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) কাছে গেলে তিনি অশোভন আচরণ করে রুম থেকে বের করে দেন। তিনি বলেন, সাত কলেজের বিষয়ে কিছু জানেন না।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, এ বিষয়ে ২১ দিন আগে তাকে স্মারকলিপি দেয়া হলেও সেটি পড়েননি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চিনেন না বলেই তিনি আক্রমণমূলক ব্যবহার করেছেন। তাই তার অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।