ছয় দফা দাবি আদায়ে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে পলিটেকনিক ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মিজানুর রহমান রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জেলাভিত্তিক সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন।
আগারগাঁওয়ের নতুন সড়কে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে বেলা ১২টার দিকে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের তরফ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার কোনো ঘোষণা না দিলে সারাদেশে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করবেন।
এর আগে শনিবার (১৯ এপ্রিল) পৌনে ১২টার দিকে ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি পালন করেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। তারও আগে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে মিছিল করেন তারা।
গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছয় দফা দাবিতে ঢাকার তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
পরে বৃহস্পতিবার তারা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কিন্তু সেদিন সচিবালয়ে বৈঠকের জন্য ডাকা হলে শিক্ষার্থীরা ওই কর্মসূচি শিথিল করেন।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর সেখানকার আলোচনা নিয়ে শিক্ষার্থীরা অসন্তোষ জানান। একইসঙ্গে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
যেসব দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
১। জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
২। ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিলসহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।
৩। উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪। কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
৫। কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দূরবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।
৬। পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।