রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: এক যুগেও মেলেনি বিচার

Date:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ (২৪ এপ্রিল)। ২০১৩ সালের এই দিনে ঘটে গিয়েছিল দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল দুর্ঘটনা; ধসে পড়েছিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত রানা প্লাজা আর প্রাণ হারিয়েছিলেন ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমজীবী। সেইসঙ্গে আহত হয়েছিলেন আরও প্রায় দুই হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ৭৮ জন।

মর্মান্তিক এ ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচার। তিন বছর আগে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রমের ৫ ভাগের একভাগও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা।

যেদিন রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ে তার আগের দিনই ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। আর সেই ফাটল অগ্রাহ্য করেই পরের দিন ভবনটির পাঁচটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের কাজে ফিরতে বাধ্য করা হয়। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এই শিল্প দুর্ঘটনার পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে ভবন মালিক সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

ভবন ধসে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে অবহেলার কারণে মৃত্যু উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় আরও একটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও সম্পদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে। এর বাইরে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। বাকি দুটি মামলা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আটকে আছে।

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে ওই দিন সাক্ষী না আসায় মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৯ মে দিন ধার্য করেন আদালত। একইসঙ্গে ১৭ জন সাক্ষীকে হাজির হতে সমন জারি করেন আদালত। আলোচিত এ মামলায় ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্য এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯৪ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি নুরুজ্জামান দোলন নামে একজন সাক্ষ্য দেন।

ভবন ধসের এ ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’র অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে রানার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। এরপর ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন শুধুমাত্র ভবনের মালিক সোহেল রানা। আসামিদের মধ্যে সোহেল রানার বাবা আব্দুল খালেক, আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা গেছেন। আর বাকিরা রয়েছেন জামিনে।

বিশ্বের ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনার একটি হিসেবে এরই মধ্যে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা।

এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া ওই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। এর অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সাভারে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

Subscribe

সর্বাধিক পঠিত

আরও
Related

পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

ভারত-শাসিত কাশ্মিরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতকে...

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দিতে দোহা থেকে রোমে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা...

পাকিস্তানের পদক্ষেপে বিপাকে ভারতের এয়ারলাইনসগুলো

কাশ্মীরে হামলার জেরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে...

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান

ভারত-শাসিত কাশ্মিরে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে...